আসন্ন সপ্তাহটি EUR/USD পেয়ার এবং অন্যান্য ডলার পেয়ারগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ফেডের নভেম্বরের বৈঠকের ফলাফল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মার্কিন ডলারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। অন্য সব মৌলিক কারণগুলো গৌণ এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং, আমরা আগামী সপ্তাহের মূল ইভেন্টগুলোর দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দেশটির পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতিমালা নির্ধারণ করেন, যার কারণে পুরো বিশ্ব, বিশেষ করে অর্থবাজারগুলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখে।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল, তা সবারই মনে আছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সময়, রিপাবলিকানরা অন্যান্য দেশগুলোকেও চাপে রেখেছিল (বিশেষ করে Huawei-কে 5G মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরি করা থেকে বিরত রাখার জন্য)। আরেকটি উদাহরণ হলো, যখন ট্রাম্প সমস্ত ইউরোপীয় গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন পণ্যের উপর থাকা বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা এবং শুল্ক তুলে না নেয় (যা এমন একটি পদক্ষেপ যা প্রায় প্রতিটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে পারত)। কানাডা এবং তার অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের দিকেও তার নজর পড়েছিল।
মার্কেটের ট্রেডারদের মনে এই ঘটনাগুলো এখনও সতেজ রয়েছে, এ কারণেই "ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমন" ট্রেডারদের দ্বারা সেই অনুযায়ী বিবেচিত হবে। যদিও ট্রাম্প মার্কিন মুদ্রার দরপতনকে সমর্থন যুগিয়ে থাকেন, তারপরও যদি এই রিপাবলিকান প্রার্থী বিজয়ী হন তবে "ঠিক সেই মুহূর্তে" নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসেবে ডলারের শক্তিশালী চাহিদা দেখা দেবে। প্রতিযোগিতা এখনও তীব্র: মূল ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস প্রায় সমান সমান অবস্থানে রয়েছেন, যেখানে তাদের মধ্যে ব্যবধান পরিসংখ্যানগত ত্রুটির সীমার মধ্যে রয়েছে।
প্রার্থীদের ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি জিততে হবে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে এমন অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে প্রায় ২১৯ এবং ২২৬টি ভোট নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে, প্রধান লড়াইটি সাতটি "সুইং" অঙ্গরাজ্যে গড়াবে, যেখানে ভোটারদের পছন্দ নির্বাচনী চক্র অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
এই অঙ্গরাজ্যগুলোর জরিপের ফলাফল ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, টাইমস/ইউগভ দ্বারা ২৫-৩১ অক্টোবর পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, হ্যারিস উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান এবং নেভাডায়—সাতটি সুইং রাজ্যের মধ্যে চারটিতে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়ায় এগিয়ে রয়েছেন, এবং অ্যারিজোনায় উভয় প্রার্থী সমান অবস্থানে আছেন। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সুইং অঙ্গরাজ্যগুলোতে হ্যারিস এবং ট্রাম্পের এগিয়ে থাকার ব্যবধান পরিসংখ্যানগত ত্রুটির সীমার মধ্যে রয়েছে।
অন্য এক জরিপে আটলাসইনটেল সমস্ত সুইং অঞ্চলে রিপাবলিকানদের জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে, যেখানে ট্রাম্পের মোট ৪৯% এবং হ্যারিসের ৪৭.২% সমর্থন রয়েছে। আটলাসইনটেল দাবি করেছে যে তাদের চার বছর আগের জরিপগুলো সঠিক ছিল, যেখানে তারা প্রতিটি সুইং অঙ্গরাজ্যের ফলাফল সঠিকভাবে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
ফাইভথার্টিএইটের এক জরিপেও ট্রাম্পের জয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এই রিপাবলিকান প্রার্থী সুইং অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে ৬২টি ইলেক্টোরাল ভোট জিতবেন এবং বিজয়ী হয়ে ওভাল অফিসে ফিরে আসবেন।
পরস্পরবিরোধী জরিপের ফলাফল নির্বাচনী উত্তেজনা বজায় রেখেছে এবং এটি তীব্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রতিফলন ঘটায়। যদি নির্বাচনের ফলাফলে যেকোন একজন স্পষ্ট বিজয়ী নির্ধারিত হয়, তবে সেই উত্তেজনা দ্রুত কমে যাবে—ট্রাম্প জিতলে সেটি ডলারের পক্ষে কাজ করবে বা হ্যারিস জিতলে ডলার দুর্বল হয়ে পড়বে।
ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির নভেম্বরের বৈঠক
সিএমইর ফেডওয়াচ টুল অনুসারে, ফেডের নভেম্বরের বৈঠকের পর সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা ৯৯%। এছাড়াও, ১% সম্ভাবনা রয়েছে যে ফেড সমস্ত আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখবে।
যদি বহুল প্রত্যাশিত দৃশ্যপট বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি মার্কিন ডলারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। ট্রেডাররা ভবিষ্যতের দিকেই বেশি আগ্রহী, বিশেষ করে অক্টোবরের নন ফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের অস্বাভাবিক ফলাফল প্রেক্ষিতে, যা মাত্র ১২,০০০ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় (পূর্বাভাস ছিল ১১০,০০০)।
আমার মতে, ফেডের নভেম্বরের বৈঠকের ফলাফল মার্কিন গ্রিনব্যাককে সমর্থন দিতে পারে। প্রথমত, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে দুর্বলতার কারণ হলো ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি (হারিকেনের আঘাত এবং বোয়িং কর্মীদের বিশাল ধর্মঘট)। তাই, ফেডারেল রিজার্ভ অক্টোবরের পরিসংখ্যান উপেক্ষা করতে পারে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ADP প্রতিবেদনে ২৩০,০০০ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, যা ভিন্ন গণনা পদ্ধতির কারণে সম্ভবত আরও নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে।
ফেডের "মাঝারি মাত্রায় হকিশ বা কঠোর" অবস্থান বজায় রাখার আরেকটি যুক্তি হলো মুদ্রাস্ফীতি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দুর্বলতা সত্ত্বেও, ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনে মুদ্রাস্ফীতির সূচকগুলোর ইতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। গড় ঘণ্টায় আয় অক্টোবর মাসে বার্ষিক ভিত্তিতে ৪.০% বৃদ্ধি পেয়েছে (সেপ্টেম্বরের ৩.৯% থেকে বেশি)। মাসিক মজুরি বৃদ্ধির হার ০.৪% এ পৌঁছেছে, যা ০.৩% পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি।
অতিরিক্তভাবে, দেশটিতে মূল মুদ্রাস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। খাদ্য এবং জ্বালানি মূল্য বাদ দিয়ে বিবেচনা করা কোর কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI) টানা দ্বিতীয় মাসে মাসিক ভিত্তিতে ০.৩% এসেছে (পূর্বাভাস ছিল ০.২%)। বার্ষিক ভিত্তিতে, কোর CPI অপ্রত্যাশিতভাবে ৩.৩%-এ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোর প্রোডিউসার প্রাইস ইনডেক্স বা উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI) মাসিক ভিত্তিতে (পূর্বাভাস অনুযায়ী) ০.২% ছিল, তবে বার্ষিক ভিত্তিতে এই সূচক ২.৮% এ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২.৭% এর পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। কোর PCE সূচকও বেড়ে ২.৭% এ পৌঁছেছে, যা ২.৬% হবে বলে সম্মিলিত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
এই কারণগুলো নির্দেশ করে যে ফেড মুদ্রানীতি নমনীয় করার মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক মনোভাব বজায় রাখতে পারে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের সম্ভাবনা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, একইসাথে ফেড প্রধান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ফেড মূল মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, যা ডলারকে অতিরিক্ত সমর্থন প্রদান করবে এবং ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফলকে ততটা গুরুত্ব না দেওয়ার ইঙ্গিত দেবে।
উপসংহার
FOMC-এর বৈঠকের ফলাফল ৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হবে, ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর পর ডলারের মূল্যের প্রবণতার পূর্বাভাস দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কেউ হয়তো ট্রাম্পের জয়ে (মার্কিন ডলার সূচক বাড়তে পারে) বা হ্যারিসের জয়ে (শান্ত প্রতিক্রিয়া, যা ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে) ডলারের মূল্যের সম্ভাব্য মুভমেন্টের অনুমান করতে পারে। FOMC-এর নভেম্বরের সভার ফলাফলের প্রতিক্রিয়ারও পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। তবে, এই মৌলিক উপাদানগুলোর সংমিশ্রণ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
EUR/USD পেয়ারের মূল্যের টেকনিক্যাল লেভেল নিয়ে আলোচনা করাও অর্থহীন, কারণ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স লেভেলও প্রচণ্ড ভোলাটিলিটির কারণে দ্রুত বিলীন হয়ে যেতে পারে। নভেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত, বা আরও সঠিকভাবে বললে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনার রাত পর্যন্ত, মার্কেটে সামগ্রিক উদ্বেগের কারণে ডলারের চাহিদা সম্ভবত বাড়বে। পরবর্তী সময়ে ডলারের দিকনির্দেশনা, এবং সেইসাথে EUR/USD পেয়ারের মূল্য হোয়াইট হাউসের নতুন বাসিন্দা এবং ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির সভার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।